১.
এই শীতের সকালে যখন আরাম করে লেপটা আরেকটু জড়িয়ে নিচ্ছি, ঠিক এমন সময় একটানে উপর থেকে গরম লেপ তুলে নিলে কেমন লাগে?
গায়ের মধ্যে হঠাৎ শীতের জোর ঝাপটাতো আছেই, সাথে লুঙ্গি পায়ে নাকি কোমরে নাকি মহাকাশের বাইরে এমন স্পর্শকাতর গোপণ তথ্য বেরিয়ে আধুনিক চিত্রকর্ম ফুটে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
একটাই সুখের কথা যে আমি মেসে থাকি।এখানে সবাই ছেলে। সবারই চিত্রকর্ম আছে তাই আমারটা ফুটলেও তেমন গায়ে লাগে না। এটার এটুকুই সুখ আর তার বাকিসবটুকুই দুঃখ।সবচেয়ে বড় দুঃখ শীত নিয়ে।হাঁড় কাঁপানো এ শীতের সকালে লেপ সরানো কতবড় অমানবিক তা যার লেপ সরে সেই বোঝে। জায়েদের মাথায় নতুন কোন আইডিয়া এলেই আমি এ দুর্ঘটনার শিকার হই। কারণ জায়েদ আইডিয়ার জোশে সারারাত ঘুমাতে পারে না। ভোর হতে না হতেই রুমের সবার লেপ সরিয়ে আইডিয়া শেয়ার করার নামে এ নৃশংস কাজ করে।
চোখ কোন রকমে খুলে দেখি জায়েদের সাথে আনামও দাঁড়িয়ে আছে। আনাম আবার ফোনের ক্যামেরা অন করে রেখেছে যাতে আমার শিল্পকর্ম হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করতে পারে। তবে অলৌকিক ভাবে আমার সবকিছু ঠিকঠাক ছিল আজ।
যাইহোক আনামের পেটে দাড়াম করে একটা লাথি মেরে বিছিনায় শোয়া থেকে বসলাম। শালার ছবি তোলা বের করে দিয়েছি এক লাথিতে। জায়েদকে অবশ্য টোকা দেয়াও সম্ভব না। প্রথম কারণ তার বাবা পুলিশ। দ্বিতীয়টি হল সে ছাত্র ভাল। পরীক্ষার হলে, এসাইনমেন্টের সময় দুধেল গরু হিসেবে সুন্দর ইউজ করা যায়। অন্য ভাল ছাত্রদের মত সে খাইষ্টা না, দশে মিলে করি কাজে বিশ্বাসী।
কম্বলটা পায়ের উপর রেখে হাই তুলতে তুলতে জায়েদকে বললাম, " বল কি হইছে? কি আইডিয়া বের করলি? আর এমনে কম্বল তুলিস না ঠান্ডা লাগে খুব।"
জায়েদ চেয়ার টেনে নিয়ে তাতে বসে সিরিয়াস হয়ে বলল, "একটা দুঃসংবাদ আছে তোর জন্য!"
আমি বিচলিত হলাম না। দুঃসংবাদ হলে গায়ের লেপ তুলেটুলে এভাবে ঘুম ভাঙাতো না। তাই ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে চোখ ঘষতে ঘষতে বললাম "কার কি হইছে? আর চশমাটা টেবিল থেকে দে তো।"
জায়েদ গলার স্বর খুব নামিয়ে বলল,"তুই কালকে মারা যাবি দোস্ত।"
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
"মানে! মরব মানে! ভাল করে বলতো কি হইছে?"
"আবদুল্লাহ তোকে আজ ভোরের স্বপ্নে দেখেছে । তুই মারা গেছিস। আমরা তোর পাশে কান্নাকাটি করছি। "
আমি মজা পেলাম। আমাকে নিয়ে সকাল সকাল ফাজলামি শুরু করেছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, "হুম, দোস্ত অবশেষে তোদের ছেড়ে যাচ্ছি তাহলে। আমার জন্য দোয়া করিস কেমন।"
জায়েদ আরো সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল, "তুই আবদুল্লার কথাও বিশ্বাস করবি না? বিশ্বাস না হলে আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করে দেখ। "
আবদুল্লাহ আমাদের রুমের সবচেয়ে ধার্মিক। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, দাঁড়ি টুপি সবসময় থাকে। তার কথা মানে সিরিয়াস কথা। আমি জায়েদকে বললাম," আচ্ছা, আচ্ছা, কি হয়েছে ভাল করে বল।"
জায়েদ গম্ভীর মুখে বলল, "আবদুল্লাহ আজ স্বপ্নে দেখছে তোকে একটা লোক খুজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। সে লোকটা তারপর আবদুল্লাহর সামনে এসে বলে আমি হাবীবকে (আমার নাম হাবীব) নিতে এসেছি হাবীব কোথায়?
(চলবে)
২.
সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে সাদা রঙের মাইক্রোটা ঢাকার ফার্মগেটের জ্যামে আটকে গেল। ড্রাইভারের সিটে বসে আছে আকরাম। গাড়িতে এসি ছাড়া। এসির মাঝেও ঘাম হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর ঘামমুছতে হচ্ছে জন্য একহাতে রুমাল। বেশি দেরি হলে ধরা পড়ে যাবে।গন্তব্যে যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততভাল। একটা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অয়ারলেসে কথা বলছে। আকরাম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশের সামনে। প্লান অনুযায়ী এপর্যন্ত কোন বিপদ আসার কথা না। তবু পুলিশ বলে কথা।
সে আসলে মফঃস্বলের ড্রাইভার। ঢাকার রাস্তায়ও কিছুদিন লেগুনা চালিয়েছিল। পরে পার্মানেন্ট ভাবে এক কাপড় ব্যবসায়ীর গাড়ির ড্রাইভারি চাকরি পায়। সেখানে পরিচিত হয় ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে শাহেদের সাথে। আকরামের সকল বদ অভ্যাস (নেশা করা), আর সাজেদের সকল বদ অভ্যাস মিলে যাওয়ায় এবং বয়সের তেমন পার্থক্য না থাকায় খু্ব অন্তরঙ্গ পর্যায়ে চলে গেছে তাদের সম্পর্ক। আকরাম শাহেদকে ভাইজান করে ডাকে।
(চলবে)
এই শীতের সকালে যখন আরাম করে লেপটা আরেকটু জড়িয়ে নিচ্ছি, ঠিক এমন সময় একটানে উপর থেকে গরম লেপ তুলে নিলে কেমন লাগে?
গায়ের মধ্যে হঠাৎ শীতের জোর ঝাপটাতো আছেই, সাথে লুঙ্গি পায়ে নাকি কোমরে নাকি মহাকাশের বাইরে এমন স্পর্শকাতর গোপণ তথ্য বেরিয়ে আধুনিক চিত্রকর্ম ফুটে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
একটাই সুখের কথা যে আমি মেসে থাকি।এখানে সবাই ছেলে। সবারই চিত্রকর্ম আছে তাই আমারটা ফুটলেও তেমন গায়ে লাগে না। এটার এটুকুই সুখ আর তার বাকিসবটুকুই দুঃখ।সবচেয়ে বড় দুঃখ শীত নিয়ে।হাঁড় কাঁপানো এ শীতের সকালে লেপ সরানো কতবড় অমানবিক তা যার লেপ সরে সেই বোঝে। জায়েদের মাথায় নতুন কোন আইডিয়া এলেই আমি এ দুর্ঘটনার শিকার হই। কারণ জায়েদ আইডিয়ার জোশে সারারাত ঘুমাতে পারে না। ভোর হতে না হতেই রুমের সবার লেপ সরিয়ে আইডিয়া শেয়ার করার নামে এ নৃশংস কাজ করে।
চোখ কোন রকমে খুলে দেখি জায়েদের সাথে আনামও দাঁড়িয়ে আছে। আনাম আবার ফোনের ক্যামেরা অন করে রেখেছে যাতে আমার শিল্পকর্ম হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করতে পারে। তবে অলৌকিক ভাবে আমার সবকিছু ঠিকঠাক ছিল আজ।
যাইহোক আনামের পেটে দাড়াম করে একটা লাথি মেরে বিছিনায় শোয়া থেকে বসলাম। শালার ছবি তোলা বের করে দিয়েছি এক লাথিতে। জায়েদকে অবশ্য টোকা দেয়াও সম্ভব না। প্রথম কারণ তার বাবা পুলিশ। দ্বিতীয়টি হল সে ছাত্র ভাল। পরীক্ষার হলে, এসাইনমেন্টের সময় দুধেল গরু হিসেবে সুন্দর ইউজ করা যায়। অন্য ভাল ছাত্রদের মত সে খাইষ্টা না, দশে মিলে করি কাজে বিশ্বাসী।
কম্বলটা পায়ের উপর রেখে হাই তুলতে তুলতে জায়েদকে বললাম, " বল কি হইছে? কি আইডিয়া বের করলি? আর এমনে কম্বল তুলিস না ঠান্ডা লাগে খুব।"
জায়েদ চেয়ার টেনে নিয়ে তাতে বসে সিরিয়াস হয়ে বলল, "একটা দুঃসংবাদ আছে তোর জন্য!"
আমি বিচলিত হলাম না। দুঃসংবাদ হলে গায়ের লেপ তুলেটুলে এভাবে ঘুম ভাঙাতো না। তাই ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে চোখ ঘষতে ঘষতে বললাম "কার কি হইছে? আর চশমাটা টেবিল থেকে দে তো।"
জায়েদ গলার স্বর খুব নামিয়ে বলল,"তুই কালকে মারা যাবি দোস্ত।"
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
"মানে! মরব মানে! ভাল করে বলতো কি হইছে?"
"আবদুল্লাহ তোকে আজ ভোরের স্বপ্নে দেখেছে । তুই মারা গেছিস। আমরা তোর পাশে কান্নাকাটি করছি। "
আমি মজা পেলাম। আমাকে নিয়ে সকাল সকাল ফাজলামি শুরু করেছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, "হুম, দোস্ত অবশেষে তোদের ছেড়ে যাচ্ছি তাহলে। আমার জন্য দোয়া করিস কেমন।"
জায়েদ আরো সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল, "তুই আবদুল্লার কথাও বিশ্বাস করবি না? বিশ্বাস না হলে আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করে দেখ। "
আবদুল্লাহ আমাদের রুমের সবচেয়ে ধার্মিক। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, দাঁড়ি টুপি সবসময় থাকে। তার কথা মানে সিরিয়াস কথা। আমি জায়েদকে বললাম," আচ্ছা, আচ্ছা, কি হয়েছে ভাল করে বল।"
জায়েদ গম্ভীর মুখে বলল, "আবদুল্লাহ আজ স্বপ্নে দেখছে তোকে একটা লোক খুজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। সে লোকটা তারপর আবদুল্লাহর সামনে এসে বলে আমি হাবীবকে (আমার নাম হাবীব) নিতে এসেছি হাবীব কোথায়?
(চলবে)
২.
সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে সাদা রঙের মাইক্রোটা ঢাকার ফার্মগেটের জ্যামে আটকে গেল। ড্রাইভারের সিটে বসে আছে আকরাম। গাড়িতে এসি ছাড়া। এসির মাঝেও ঘাম হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর ঘামমুছতে হচ্ছে জন্য একহাতে রুমাল। বেশি দেরি হলে ধরা পড়ে যাবে।গন্তব্যে যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততভাল। একটা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অয়ারলেসে কথা বলছে। আকরাম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশের সামনে। প্লান অনুযায়ী এপর্যন্ত কোন বিপদ আসার কথা না। তবু পুলিশ বলে কথা।
সে আসলে মফঃস্বলের ড্রাইভার। ঢাকার রাস্তায়ও কিছুদিন লেগুনা চালিয়েছিল। পরে পার্মানেন্ট ভাবে এক কাপড় ব্যবসায়ীর গাড়ির ড্রাইভারি চাকরি পায়। সেখানে পরিচিত হয় ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে শাহেদের সাথে। আকরামের সকল বদ অভ্যাস (নেশা করা), আর সাজেদের সকল বদ অভ্যাস মিলে যাওয়ায় এবং বয়সের তেমন পার্থক্য না থাকায় খু্ব অন্তরঙ্গ পর্যায়ে চলে গেছে তাদের সম্পর্ক। আকরাম শাহেদকে ভাইজান করে ডাকে।
(চলবে)
Comments
Post a Comment