বিকেল বেলাতে আবুল সচরাচর ঘুমায় না। আজ দুপুরে বাসায় পোলাও মাংস রান্না হয়েছে।ফলাফল ভরপেট খাওয়া। খেয়ে নিজেকে বিছানায় এলিয়ে দিতেই তার ঘুম কখন চলে এসেছে টের পায় নি।
ঘুমানোর আগে অবশ্য ফিওনার ব্যাপারে চিন্তা করছিল সে। ফিওনার সাথে আবুলের সম্পর্ক ছিল ছয় মাসের।তারপর সম্পর্কে ফাটল। ফিওনা আবুলকে শেষ কথা বলেছিল যে "আবুল, জ্যোতিষী অামাকে বলেছে তোমার অন্য জায়গায় সম্পর্ক আছে। তোমার হাতের রেখা তাই বলে। ইউ নো আমি তোমাকে বিলিভ করতাম আর তুমিই কিনা! আমার সাথে আর যোগাযোগ করবা না বুঝছ। বাই, বেবি। টেককেয়ার। "
আবুলের অন্য কোথাও কোন সম্পর্ক নাই। আবুল অনেক বার একথা বলেও কোন ভাবেই ফিওনাকে আর ফেরাতে পারেনি । অন্য আরেকজনের গার্লফ্রেন্ড এখন ফিওনা।
আবুল তবু আবুলের মত আশায় বসে আছে। একদিন না একদিন ভুল ভাঙবে ফিওনার। ফিরে আসবে তার কাছে। তার সত্যিকারের ভালবাসার জয় হবেই। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের অতলে তলিয়ে গিয়েছে সে।
তার নাকের ডগার উপর একটা মশা বসেছে। রক্ত খাচ্ছে না। চোখ বুজে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আবুলকে দেখছে। জানালা দিয়ে বিকেলের নিস্তেজ সূর্যের তরল আভা এসে পড়ছে আবুলের কপালে, চুলে। কি কোমল চেহারা! মশাটি পেছনে ঘুরে তাকায়। কাথা মুড়ে ঘুমোনোয় আবুলের "ঘুষ খাওয়া পুলিশের" মত ঝুলে পড়া ভুড়িটা পাহাড়ের মত দেখাচ্ছে। নিঃশ্বাসের সাথে সে পাহাড় একবার ওঠে, একবার নামে। তাকিয়ে থাকে সে অপলক।
এসময় আবুলের কানের নিচে সেই মশার শাশুড়ি গিয়ে বসে। রক্ত খাবার একফাঁকে নাকের উপর বৌ মাকে অলস বসে থাকতে দেখে তার চোখ সরু হয়ে যায়। একি ব্যাপার! রক্ত খাওয়া বাদ দিয়ে ফকিন্নির ঘরের ফকিন্নি বসে হাওয়া খাচ্ছে! কিছু বলা দরকার।
উড়ে গিয়ে এবার আবুলের গালে বসে বৌমাকে উদ্দেশ্য করে বলে
"কি ব্যাপার বৌমা! বলি এখানে বসে বাতাস খেলে কি আমার নাতিপুতি হবে?"
বৌমা শাশুড়ির দিকে না তাকিয়ে বলল
"মা, সব সময় নাতিপুতি না করে একটু চোখ খুলে চারপাশটা দেখুন। লোকটা কি কিউট! বিশেষ করে চোখ গুলো। "
শাশুড়ি বিরাট ধাক্কার মত খেলেন। বৌমার মুখে একি কথা শুনছেন আজ! যে প্রাণী সামনে পেলেই তাদের ঠাস করে মেরে চ্যাপ্টা করে ফেলে, কয়েল, স্প্রে হাবিজাবি দিয়ে তাদের শাহী বংশের পরিবার পরিকল্পণা করে ছেড়ে দিচ্ছে তাদের কিনা অবশেষে "কিউট" বলছে বৌমা! তার ছেলের সাথে বিয়ের সময় অনেকে বলেছে এ মেয়ের মাথায় হালকা ছিট আছে। বিশ্বাস করে নাই। এখন যা দেখছেন তাতে মনে হচ্ছে মেয়ের মাথায় ছিট, ব্রেঞ্চ, চেয়ার টেবিল সবি থাকার কথা।
তিনি বাজখাই গলায় বললেন "ওসব পাগলামি বাপের বাড়িতে গিয়ে দেখাবি। এখন রক্ত খেয়ে আমার বংশ উদ্ধার কর।"
"না মা, এই লোকের রক্ত আমি খেতে পারব না। "
"কেন? কেন খেতে পারবি না?"
"জানি না কিন্তু খেতে পারব না। "
"ওরে আমার মহারাণীরে, আজ বাসায় আয়। তোর বিচার বসাব আজ। আমার ডিম পাড়ার সময় হয়েছে, আমি গেলাম।আজ খালি বাসায় আয় তুই।"
শাশুড়ি উড়ে চলে গেল। আজ বাসায় এই কুটনি বুড়ি ঝামেলা করবে। আগেই গিয়ে কিছু একটা করত হবে। কিন্তু তার এখন কেন এমন হচ্ছে। মানুষটার মাঝে কি আছে যা তাকে আকর্ষণ করছে! সে লোকটার উপরে উড়তে শুরু করল। উড়তে উড়তে টেবিলের পাশের ছবিটায় চোখ আটকে গেল মশাটার। টেবিলে গিয়ে বসল এবার। লোকটির হাসিমুখ ওয়ালা একটা ছবি। ভাল করে লক্ষ করল এবার। ছবিতে গলায় একটা মশা বসে আছে। চিনতে ভুল হল না। এটা মা। অর্থাৎ মা এই লোকটার গা থেকেই রক্ত নিয়ে তাকে জন্ম দিয়েছে! লোকটার সাথে তাহলে মায়ের সম্পর্ক ছিল!
এবার বুঝল কেন সে লোকটার প্রতি এত মায়ার জন্ম হচ্ছিল। কাঁথা থেকে একটা পা বেরিয়ে ছিল একটু। পিতৃতুল্য এই মানুষটার সেই বের হওয়া পায়ে বসল সে। গভীর মায়ায় পায়ে সালাম করল। মশাটা বসায় আবুল ঘুমের মাঝেই পা নাড়াল। মশাটা পড়ে গেল। সে পিনপিন করে বলল
"কেন বাবা, পা সরিয়ে নিচ্ছেন? আমি যদি আগে সব জানতাম তাহলে আগেই আসতাম। এই দুঃখীটাকে ফিরিয়ে দেবেন না আজ।"
আবার পায়ে বসে পায়ে সালাম করল মশাটা। এবার পা নড়াল না আবুল।
তারপর মশা পা থেকে উপরে উঠে জানালা দিয়ে চলে যেতে যেতে বলল
" বিদায়। ভাল থাকবেন। "
আবুলের আর ভাল থাকা হয় নি। কারণ ফিওনা ফিরে আসে নি।
Comments
Post a Comment