Skip to main content

রাকিব (গল্প) (মোজাহিদুল ইসলাম পলাশ )

রাকিব নামটা আমার মা দিয়েছিল। জন্মের দুই মাস পর আমার নাম করণ হয়। বাবা, ছোট চাচা মিলে পিয়াস নাম দেয়ার চেষ্টা করলেও মার জোরাজুরিতে রাকিব নাম টাই থেকে যায়। রাস্তা দিয়ে হাটলে সবাই রাকিব নামে ডাকে। পেছনে ফিরি না। ভয় করে। নিজের মত চলতে থাকি। ওরা কেউ ভাল না। সবচেয়ে খারাপ আমার ক্লাশের ছেলে গুলো।সব বাজে কথা তাদের মুখে।
এখন আমি ক্লাশ টেনে পড়ি। এর আগের বছরেও টেনে ছিলাম। ফেল করার কারণে এবারও টেনে। মা বলেছে ভাল করে পড়তে হবে, এবার পাশ করতে হবে, ভাল একটা চাকরি করে ভাল বউ আনতে হবে। বউ! আমার খুব লজ্জা করছিল কথাগুলো শুনতে। বিয়ে আমি করব না। ছি! কি লজ্জা। আমি একা আমার ডগিকে নিয়ে আছি এটাই ভাল। ডগি আমার বন্ধু, আমাদের বাড়ির পোষা কুকুর। আমার সব থেকে আপন বন্ধু। ও ছাড়া আমাকে ভাল করে আর কেউ বুঝতে পারে না।

সকালে উঠে দাঁত মাজা খুব খারাপ। ইচ্ছে করে না। মার কারণে মাজতে হয়। না মাজলে খুব রাগ করে। দাঁত মেজে খেয়ে স্কুলে যেতে হয়। বাবা আমাদের লাল গাড়িটায় স্কুলে পৌছে দেয়। আমি একা হেঁটে স্কুল গেট থেকে ক্লাশ রুম পর্যন্ত যাই। যাবার সময় খুব ভয়ে ভয়ে থাকি এই বুঝি হাসান, রুবেল, শিলারা দেখে ফেলল। ছোট ক্লাশের ছেলেরাও খুব খারাপ। আমাকে দেখে পাগলা পাগলা করে ডাকে। আমি কারও দিকে দেখিনা। কলেজের আপুরা আমাকে দেখলে আমার ফোন নাম্বার চায়, সকালে কি খাইছি, গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা জিজ্ঞেস করে আর খিল খিল করে হাসে সবাই। আমি খুব চেষ্টা করি তাদের এড়িয়ে চলতে। টিফিনে তাই ক্লাশে থাকি বের হই না। আমার ক্লাশের কিছু ছেলে খুব খারাপ। তার মাঝে রুবেল সবচেয়ে বেশি খারাপ। স্যারের ভয়ে আমি সবার পেছনে বসি, রুবেলও আমার আশেপাশে বসে। আর পুরো সময় জুড়ে আমাকে খুব বাজে বাজে ছেলে মেয়েদের গোপণ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে। আমার গায়ে হাত দিতে চায়। তবে শান্তনু নামের হিন্দু ছেলেটা ভাল, সে সবসময় রুবেল আর বাকি ছেলেদের আমার সাথে এমন করা নিয়ে রাগ করে। আমি ওকেও এড়িয়ে চলি। আসলে আমি সবাইকেই এড়িয়ে চলি। নিজের মত থাকি। আমার ফোন আছে। বাবা দিয়েছে। কিছু করার না থাকলে বসে বসে গেমস খেলি। আমার বড় ভাইয়া আমাকে গেমস ভরে দেয়। আমি গেমস আর ডগিকে নিয়ে ভাল আছি।

স্কুল থেকে এসে ব্যাগ রেখে টিভিতে বসেছি। কার্টুন নেটওয়ার্ক। সামনে টেবিলে দেখি ভাইয়ার ফোন। কিছুক্ষন পরপর মেসেজ আসছে। আমি ভাইয়ার ফোনে কখনও হাত দেই না। খুব রাগ করে। এত মেসেজ আসছে দেখে ফোনটা তুলে দেখা শুরু করলাম। মেসেজ যে দিচ্ছে তার নাম লেখা "সাম ওয়ান" । ভাইয়া সেই নামেই সেভ করে রেখেছে। মেসেজে লেখা "জান, সরি, এবার ফোনটা ব্যাক কর প্লিজ" সব মেসেজই একই লেখা। ভাইয়া বাজার করতে গেছে। তাই যে ফোন ব্যাক করতে বলছে তাকে ফোন ব্যাক করা সম্ভব না ভাইয়ার। তাকে কি ফোন করে বলা উচিৎ যে ভাইয়া নেই? চিনিনা জানিনা কি বলব আমি! যদি রাগ করে আমার উপর! আবার মেসেজ আসে। আমি ভয়ে ভয়ে এবার ফোন দিলাম। ওপাশে একটা মেয়ে ধরে বলল "হ্যালো, এই তোমার রাগ ভাঙ্গলো এতক্ষণে? "

আমি আস্তে আস্তে বললাম" আমি রাশেদ ভাইয়ার ছোট ভাই রাকিব, ভাইয়া বাজারে গেছে, এক কেজি আলু আর দুই প্যাকেট লবণ কিনে তার পর আসবে। "

মেয়েটা বলল "ও ভাইয়া তুমি! ভাল আছো ভাইয়া! "

আমি বললাম" হুম"

মেয়েটা বলল "আচ্ছা ভাইয়া, ভাল থাকো, এখন রাখি তাহলে" "আচ্ছা রাখো। "


সেই কথা বলার পর থেকে বুঝতে পারি এটা ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড। সকাল, দুপুর, রাতে ভাইয়া ছাদে এই মেয়ের সাথে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে একা একা। কথা বলে আর একা একা হাসে। আমি লুকিয়ে সিড়ি থেকে দেখি।
ভাইয়া প্রেম করে কথাটা মাকে বলতেই মা বাবা, ছোট চাচাকে বলে দেয়। সবাই মিলে খুব রাগ করে ভাইয়ার উপর। ভাইয়া তারপর থেকে আর আমার সাথে কথা বলে না। এখন দিনের বেলায় বাসায় খুব কম থাকে। মাকে বলে দেয়াটা মনে হয় ঠিক হয় নি। কিন্তু প্রেম করা তো খারাপ, প্রেম খারাপ ছেলেরা করে।

ক্লাশের অংক পরীক্ষায় চল্লিশের মাঝে আমি পেয়েছি পঁয়ত্রিশ। আমি ক্লাশের মাঝে প্রথম। কেমন জানি লাগছে। আমি সবার পেছনের ব্রেঞ্চে বসে খাতা দেখছি। কাল স্যার যে অংক গুলো করিয়েছিল সেগুলই আজ ক্লাশের স্যার করতে দিয়েছে। সব করে দিলাম। একটা অবশ্য ভুল। চোখ তুলতেই দেখি আমার সামনে নিজের খাতা হাতে শিলা দাঁড়িয়ে। আমার হাত থেকে আমার খাতাটা এক রকম কেড়ে নিল। উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখল। নীচ দিয়ে শীলার খাতার নম্বর টা দেখা যাচ্ছে সেও পঁয়ত্রিশ পেয়েছে। আমার কেন জানি হাসি চলে এল শিলাও পঁয়ত্রিশ আমিও পঁয়ত্রিশ। সমান সমান আমরা। আমরা! আমরা কথাটা ভাবার সাথেই কেমন যেন লাগল নিজের মাঝে!
শিলা খাতা রেখে চলে গেল কিছু বলল না। ক্লাশ শেষে আমি বাসায় ফিরে এলাম। সবসময় "আমরা" কথাটা কানে বাজতে লাগল। ধুর কি সব চিন্তা। ছি!

এরপর দু তিন মাস কেটে যায়। শিলার কথা, অংক পরীক্ষার কথা ভুলে যাই।
এক রাতে আমার ফোনে একটা মেসেজ আসে, কি কর?

অচেনা নাম্বার। অচেনা মানুষকে কি করি বলা ঠিক হবে না। কোন রিপ্লাই দেই না। পরের দিন ক্লাশে যাবার পর টিফিনে সবাই যখন বাইরে গেছে শিলা আমার সামনে এসে বলল "তোমাকে কাল মেসেজ দিলাম! রিপ্লাই দিলে না যে? নাকি মেসেজ দিতেই জানো না? "

আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে আছি। কোন মেয়ের দিকে কখনই তাকাই না। আস্তে আস্তে বললাম " মেসেজ দিতে জানি, অচেনা নাম্বারে আমি রিপ্লাই দেই না। "

শিলা বলল" তা ভাল, এখন চিনলে তো?"

আমি বললাম "হু চিনলাম"

এখন থেকে রিপ্লাই দিবা?

হুম দিব।

আচ্ছা দিয়ো, টিফিনে তুমি কিছু খাও না?

 না।

কেন?

খেতে ইচ্ছে করে না।

 আন্টি টিফিন দেয় না?

না।

বলবা টিফিন দিতে।

না।

কেন?

এমনি।

আচ্ছা বলিও না। আসো, আমার টিফিন আছে একসাথে খাই।

না লাগবে না।

আরে লজ্জার কি আছে আসো।

না না, খাব না, তুমি খাও।
আমি আরও লজ্জায় কুকড়ে যাই। এ সময় ওর একটা বান্ধবী ডাকায় ও চলে যায়। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। মেয়েটা এমন কেন! গায়ে পড়ে কথা বলে।

রাতে খেয়ে শুয়ে পড়েছি। মা মশারি টাঙিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় ফোনে শিলার মেসেজ আসল। লেখা "ঘুমাইছো? " এটা কেমন প্রশ্ন! ঘুমাইছি নাকি ঘুমাইনি! কোন উত্তর দিলাম না। ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন স্কুলে শিলা আর জিজ্ঞেস করল না কেন রিপ্লাই দেই নি। টিফিনে ক্লাশ থেকে পালিয়ে মাঠে বসে রইলাম। কোন দরকার নেই। কিন্তু পরের দিন গুলোতে শিলা কিছু বলল না। সামনা সামনি হলেও কিছু বলেনি দেখে কেমন যেন লাগল। আমি প্রতি রাতে শিলার মেসেজের অপেক্ষা করতে লাগলাম।

তার কিছুদিন পর টিফিনের সময় ক্লাশের সবাই বাইরে গেলেও শিলাকে দেখি মাথা নিচু করে নিজের জায়গায় বসে। শিলা আমাদের ক্লাশের সবথেকে ভাল ছাত্রী, সব পরীক্ষাতে সবার চেয়ে বেশি নম্বর পায়, তাই সবসময় পড়া নিয়ে ব্যম্ত থাকতে দেখি। আমি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাচ্ছিলাম আবার আড় চোখে ওর দিকে। একবার তাকাতে গিয়ে চোখাচোখি হল। দেখে একটা হাসি দিল। আমিও হাসি দিয়ে জানালার দিকে চোখ ফেরালাম। সেদিন রাতে শিলার মেসেজ এল
কি করতেছো?

কিছু না। তুমি কি কর?

কিছু না। আজ হঠাৎ রিপ্লাই দিলে যে?

এমনি। পড়াশুনা শেষ?

আমিতো পড়াই পড়ি না শেষ হবে কেন বল? তোমার শেষ?

না। আমি একা একা পড়তে পারি না। স্যার সামনে থাকলে পড়ি।

তাই নাকি! ভাল। জানালা দিয়ে আজ টিফিনে কি দেখছিলে?

কিছু না, এমনি। তখন তোমার মন খারাপ ছিল কেন? মা বকেছে?

হুম, অনেক বকেছে।

কেন বকেছে।

ধুর, মা বকবে কেন। মা বকেনি। আমার মন খারাপ ছিলও না।

এখনই যে বললে মা বকেছে।

এমনি বলেছি।

এমনি কেন?

এমনি কারণ তুমি একটা লক্ষী ছেলে বুঝছো।

না, বুঝি নাই!

বুঝতেও হবে না, এখন ঘুমাবো, বাই।

বাই।

তারপর প্রতি রাতে শিলার সাথে কথা হতে লাগল। খুব ভাল মেয়েটা। পড়াশুনার, খাওয়া দাওয়া, আমার ডগিটা আমার প্রায় সবকিছুর প্রতিদিন খোজ নেয়। আমার খুব ভাল লাগে কথা বলতে। ডগির পর আমার আর একটি বন্ধু হয়ে গেল শিলা। শিলা শর্ত দিয়েছিল এই কথা বলাটা কেউ যেন জানতে না পারে। কাউকে বলিনি আমি। সারাদিন অপেক্ষা করি কখন রাত হবে, কখন কথা শুরু হবে। শিলার প্রিয় রং নীল, শিলার আইসক্রিম খেতে ভাল লাগে, মাঝে মাঝে কবিতা লিখে আমাকে পাঠায়, ফেইসবুকে আড্ডা দেয় আর পড়াশুনা করে। আমার অবশ্য ফেইসবুক নেই।

টেষ্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়। ফলাফলে শিলা সবার আগে, আমি সবার পেছনে। ও আগে হবে কেন! ভাল লাগে না। ইদানিং কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছে। আগের মত সময় দেয় না, অল্পতেই বলে অনেক তো হল এবার ঘুমাও। আমি বলি ঘুম পায় নি। ওপাশ থেকে কোন রিপ্লাই আসে না আর। আজ শিলাকে বলব কেন এমন করে।

টিং টং... রাকিব সাহেব কি করেন?

কিছু না। আজ এত দেরি যে?

আম্মু পাশে ছিল এতক্ষণ।

কথা কমিয়ে দিয়েছো আমার সাথে। আজ থেকে আগের মত অনেকক্ষণ নিয়ে কথা বলবে।

আর যদি না বলি?

বলতেই হবে। না হলে খারাপ কিছু করে ফেলব কিন্তু।

কি খারাপ করবা আমার?

এবার আমি চিন্তায় পড়ে যাই। কি খারাপ করব! আমার হাতে সুপারম্যানের পাওয়ার নেই যে আকাশে তুলে নিয়ে ফেলে দেব। অনেক চিন্তার পর বললাম।

আমার আর তোমার কথা হয় এটা সবাইকে বলে দেব।

দাও।

দেব কিন্তু। পরে আমাকে পঁচা বলতে পারবা না।

বলব না। বলে দাও। বলে দিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়ে যদি তোমার ভাল লাগে বলে দাও।

আচ্ছা বলব না। তোমার সাথে কথা না বললে থাকতে পারি না। খুব একা একা লাগে।

তাই!!!!!!

হুম। আমাকে ছেড়ে যাবা না তো?

নাহ! কোন দিনও না।

তোমার বিয়ে হলে?

বিয়ে হলে তো ছাড়তেই হবে। তোমরা ছেলেরাই তো অন্য ছেলের সাথে কথা বলি সহ্য করতে পার না।

তাহলে আমার কি হবে?

আরে এত চিন্তা কর না, সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন ঘুমাও, বাই।

কিন্তু ঠিক হবে কিভাবে?

আর কোন রিপ্লাই আসে না। সকাল হলে কোচিং এ যাই।কোচিংএ আশিক আর সুমনা নামের দুজন ছেলে মেয়ে ফাঁকা রুমে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। কিছু বাইরের ছেলে এসে আশিককে খুব মারছে সবার সামনে। কিন্তু আশিক কিছুক্ষণ পরপর বলছে ও সুমনাকে ভালবাসে। শেষে ওদের বাবা মা আসে। অনেক গোলযোগের পর অবস্থা শান্ত হয়। এই ফাঁকে ভাবতে ভাবতে শিলার সাথে একসাথে থাকার উপায় পেয়ে গেলাম। রাতে শিলাকে বললাম "একসাথে থাকার উপায় পেয়ে গেছি। "

কি উপায়?

তুমি আমাকে বিয়ে করলে আর কেউ আলাদা করতে পারবে না।

তুমি না বলেছো কোনদিনও বিয়ে করবে না।

তোমার জন্য পাল্টাতে হচ্ছে।

হুমম, খুব ভাল, চল কালকেই বিয়ে করে ফেলি।

কালকেই! আমরা তো এখনও ছোট! বড় হয়ে বিয়ে করি?

না কালকেই করব।

আমিতো চাকরি করি না খাওয়াবো কি তোমাকে?

তুমি যা খাও তাই খাওয়াবা।

আচ্ছা। বাবা মাকে কি বলব?

ধুর, এই তোমার আমাকে বিয়ে করার এত শখ?

তোমাকে ছাড়াতো থাকতে পারবো না তাই।

পাগল ছেলে। এক কাজ কর আমাদের ক্লাশের সাথি নামের মেয়েটা আছে না ওর সাথে কথা বলে রিলেশন কর, পরে বিয়ে করে নিও।

বুঝছি তুমি আমাকে বিয়ে করবে না তাহলে?

আমি কি না বলছি নাকি। আমার চেয়ে সাথি অনেক সুন্দর ওকে বিয়ে করলে ভাল হয় তাই বললাম।

আমি তোমাকেই বিয়ে করব। আজ ক্লাশে আশিককে খুব মারল তাই না। আমার খুব খারাপ লেগেছে।

হুম। প্রেম করলে তো শাস্তি পেতে হয়, পরে যখন ওরা বিয়ে করবে এর চেয়েও অনেক সুখ পাবে।

তাই তো বিয়ের আগে প্রেম করতে হয়।তাহলে চল আমরা প্রেম করি।

কি?

তাহলে চল আমরা প্রেম করি।

হুমম খুব ভাল, ঘুমাও। বাই।

বাই।

পরদিন আবার বললাম। প্রেম করবা না আমার সাথে?

কে বলেছে আমরা প্রেম করছি না? এটাই তো প্রেম।

সত্যি?

হুম।

সত্যি সত্যি প্রেম!

হুম সত্যি সত্যি প্রেম।

তুমি আমার গার্ল ফ্রেন্ড তাহলে?

হুম। এখন ঘুমান। কাল কোচিং এ পরীক্ষা আছে পড়ে আসবেন।বাই।

বাই।

এরপর সারারাত আমার ঘুম হয় না। খুব ঠান্ডা পড়েছে তাও ছাদে চলে যাই। কাঁপতে কাঁপতে দোলনাটায় গিয়ে বসি। আমি প্রেম করছি! আমি! যাই দেখি তাই ভাল লাগে। ঘন কুয়াসা, ঠান্ডা আমার আনন্দ এতটুকুও কমাতে পারে না। এমনি এমনি হেসে উঠি। ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে কোল বালিশটাকে শিলা বানিয়ে আদর করি। বলি "তোমাকে কোন দিন আলাদা হতে দেব না "। বুকের সাথে চেপে ধরি খুব জোরে। খুব ভাল লাগতে শুরু করে। কখন রাত কেটে যায় টের পাই না।

এস এস সি পরিক্ষার আর এক মাস আছে।সারাদিন বাসায় কোন না কোন স্যার এসে পড়াচ্ছে। শিলা আগের চেয়েও কথা কমিয়ে দিয়েছে। সারাদিনে কিছুই পড়ি না। মন পড়ে থাকে শিলার কাছে, কখন রাত হবে শিলা মেসেজ দেবে।রাত হয়। বইয়ের ফাঁকে ফোন রেখে ওয়েট করি। কিন্তু মেসেজ আসে না।

পরদিন কোচিংয়ের এক ফাঁকে শিলাকে একা পাই। মেসেজ দিল দিল না কেন বলি। বলল বাসায় ফোন ইউজ করতে দেয় না। তারপর চলে যায়। আমার অনেক কথা জমা, কিছুই শোনানো হয় না।

রাতে মেসেজের জন্য বারবার ফোন চেক করি, কিন্তু কিছুই আসে না। আস্তে আস্তে দিন যেতে থাকে বুঝতে পারি আর কোন মেসেজ আসবে না। একদিন শিলার সাথে এক ছেলেকে পার্কে হাত ধরে হাটতে দেখি। আমার সাথে শান্তনু ছিল শিলা আর ওই ছেলের অনেকদিনের সম্পর্ক আমাকে জানায়। আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যায় আমার সাথে কি হচ্ছে। বাসায় যাই কিছু ভাল লাগে না, বুকের মাঝ খানে কেউ খুব জোরে চেপে ধরে আছে। ডগিকে খুব জোরে লাথ্থি মারায় ডগি ছাদ থেকে পড়ে গেল। নিচে গিয়ে দেখি মরে গেছে।  প্রাচীরের সূচালো লোহাগুলোয় শরীর এফোড় ওফোড়। রড গুলোর গা বেয়ে টপটপ করে রক্তের ধারা বইতে লাগল। ডগির মৃত্যু আমার কারণে হয়েছে। নিজেকে সামলাতে পারি না। সব ভেঙে ফেলতে মন চাইল। লাঠি দিয়ে ঘরে সব কিছু ভাঙা শুরু করলাম। কত কিছু ভেঙেছি মনে নেই হুস হল মায়ের মাথায় মারার পর। মা আটকাতে এসেছিল, লেগে গেছে। মাথার ভেতর থেকে রক্ত গড়িয়ে আসছে। আমাকে বাবা, ভাইয়া মিলে চেপে ধরল। আমি বিষ্ফোরিত চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে ।

একটা ঘরে বেঁধে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে ওরা। গায়ে সোয়েটার ছিল না তাই ঠান্ডা লাগছিল, মাথায় ব্যান্ডেজ করা মহিলা এসে সোয়েটার পরিয়ে দিয়ে গেছে, যাবার আগে অনেকক্ষণ কাঁদলো । এটা কার ঘর চিনি না। ঘরের মাঝে একটা ছেলের ছবি। কিছুক্ষন পর পর কিছু লোক আসছে যাচ্ছে। কাউকেই চিনি না। এখন আমার সামনে লম্বা মতন একটা লোক দাঁড়িয়ে। হাতে ফোন। ফোনটা রেখে পাশে বসে আমার  মাথায় হাত দিল। আমি ঘরের ওপাশে ছবিটার দিকে তাকিয়ে। লোকটা কি চায়! হঠাৎ আমার হাতটা ধরে বলল "ভাই তুই আমাকে চিনতে পারছিস না? আমি রে, আমি, আমরা একসাথে খেলতাম, খেতাম,মনে নেই, এই দেখ আমাদের দুজনের ছবি, এই দেখ, এই দেখ, তবুও মনে পড়ছে না? "

 আমি আসলেই চিনতে পারছি না লোকটাকে। আমার হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আমি ছাদের দিকে তাকালাম ফ্যান দেখা যাচ্ছে। এটা দিয়ে কি হয় মনে নেই। আমার শুধু একজনের কথা মনে আছে, নাম "শিলা"। কিন্তু কাউকে তা বলা যাবে না এটা। ও নিষেধ করেছে।

Comments

Popular posts from this blog

Top 10 Bangladeshi Economist I বাংলাদেশের সেরা ১০ অর্থনীতিবিদ

Wahiduddin Mahmud is Professor of Economics, University of Dhaka. He was Advisor (Minister) for Finance and Planning of the non-party Caretaker Government of Bangladesh in 1996. His recent publications include an edited volume of the International Economic Association titled Adjustment and Beyond: The Reform Experience in South Asia He completed his matriculation from Annada Government High School, Brahmanbaria. Then He moved to Dhaka to study Economics in Dhaka University. He obtained his PhD in economics from Cambridge University.He joined University of Dhaka as a professor of economics. He is a member of International Growth Centre based at London School of Economics. He has held positions at Cambridge University, Oxford University, IDS at Sussex, IFPRI, and the World Bank. He was part of many government committees and commissions in Bangladesh relating to micro-finance, national income, agricultural reforms, PRSP and MDG monitoring. He has also partici...

Abar ( আবার ) Lyrics - Minar Rahman

Abar ( আবার ) Lyrics - Minar Rahman তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে ?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে ? দেবো না জল আসতে চোখে ,  কোনদিনও আর ,  আর একটি বার দাও যদি জল মোছার অধিকার । তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে ?  আমি তোমার নতুন ভোরের সূর্য হতে চাই ,  আমি আবার তোমার আসার প্রদীপ হতে চাই ।  দেবো না জল আসতে চোখে,  কোনদিনও আর,  আর একটি বার দাও যদি জল মোছার অধিকার ।  তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে?  মুছে ফেলো অভিমানের দাগটি তুমি এবার,  হাসির আলো,  আমায় করো আলোকিত আবার । দেবো না জল আসতে চোখে,  কোনদিনও আর,  আর একটি বার দাও যদি জল মোছার অধিকার।  তুমি কি আমার হাসি সুখের আবার কারন হবে?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে? Song: Abar Singer: Minar Lyrics: Snahashish Ghosh Music: Rezwan Sheikh Cast: Siam & Saira DOP: Suman Sarker Direction: Mahmudur Rahman Hime Asst director team: Emran Robin, Dipto...

Bangladeshi Movie Download Sites (বাংলাদেশী মুভি ডাউনলোড)

NEXTGEN BD - http://180.200.238.22/ Orangebd- orangebd home bd http://103.3.226.206/ Bangla Movie Download Sites new bangla movie Bangladeshi movies