প্রথম আলো ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বাংলাদেশে সর্বাধিক বিক্রির কারন / The reasons for the biggest selling paper Prothom Alo and Bangladesh Protidin in Bangladesh
প্রথম আলো
বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রচার সংখ্যা
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ২০১৪ সালের ১০ মার্চ সংসদে ঢাকা ও অন্যান্য এলাকা থেকে প্রকাশিত ৩৪৫ টি পত্রিকার প্রচার সংখ্যা প্রকাশ করেন। এটি ২ মার্চ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তত্বাবধানে তেরি করা হয়েছিল।এতে তথ্যমন্ত্রী বলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ৫.৫৩ লাখ ও প্রথম আলো পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ৫ লাখ।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ৪ জুন, ২০১৬ তে বাংলাদেশে মিডিয়া তালিকাভুক্ত পত্রিকা গুলোর কত কপি ছাপা হয় তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ প্রচার সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রচার সংখ্যা শীর্ষে এবং প্রথম আলো ছাপা সংখ্যা ৫ লাখ ১ হাজার ৮০০।
২০১৭ সালের জুলাইয়ের ১৮ তারিখে নতুন প্রকাশিত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের ছাপা সংখ্যা ও প্রথম আলোর ছাপা সংখ্যা অপরিবর্তিত ভাবে যথাক্রমে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০টি এবং ৫ লাখ ১ হাজার ৮০০টি রয়েছে।
সংবাদপত্রের বিপণনের পিছনে ১৭ টি প্রধান কারন
কোন দেশে সংবাদপত্র বিপণন সে দেশের জনসংখ্যার হারের উপর নির্ভরশীল। ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলির মধ্যে একটি। ঢাকায় মানুষ সাধারণত তাদের বাড়িতে, অফিসে, প্রতিষ্ঠানে ইত্যাদিতে সংবাদপত্র পড়তে ভালবাসে। অপরপক্ষে দেশের অন্যান্য জায়গায় জনসংখ্যার হার কম। সেখানে সংবাদ পত্রের পাঠক সংখ্যাও কম। তাই বাংলাদেশের অন্য শহরের তুলনায় ঢাকা শহরে বেশি কপির প্রয়োজন। তাই কোন পত্রিকা অফিসকে জনসংখ্যার হারের এই দিকটি মাথায় রাখতে হয়।
২. শিক্ষার হার -
শহরে শিক্ষার হার গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি। শিক্ষিত লোকেরা দেশ ও দেশের বাইরের পরিস্থিতির খবরাখবর রাখতে পছন্দ করে। এজন্য বেশিরভাগ পত্রিকা শহর কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। এদিকে গ্রামে যেমন শিক্ষিত লোকের সংখ্যা কম তেমনি পত্রিকা নেবার প্রচলনও তেমন নেই। তাই সেখানে বিপননের হার কম।
৩. ঋতু -
প্রতি ঋতুতে দেশে বিভিন্ন দূর্যোগ লেগে থাকে। গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখী সারাদেশে তান্ডব চালায়, বর্ষাকালের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও বন্যায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে, শীতকালে প্রতিদিন সর্বত্র কুয়াশা হয়। একারনে পত্রিকার বিক্রিও কমে যায়।
৪. নির্দিষ্ট সময়-
জুন-জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় হকাররা বৃষ্টির জন্য সহজে ক্রেতাদের কাছে যেতে পারে না। রাজনৈতিক দাঙ্গা, হরতাল, ঈদের আগে ট্র্যাফিক জ্যাম সাধারণত পরিবহন ব্যবস্থায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে। সেই সময়ে সংবাদপত্রের বিপণনে নানা সমস্যা পোহাতে হয় যা বিক্রি কমিয়ে দিতে পারে।
৫. ভৌগলিক অবস্থান-
পত্রিকা ছাপাখানা থেকে যে শহরগুলো কাছে সেখানকার মানুষ পত্রিকা তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়। কারণ হকাররা এই সংবাদপত্রের কপিগুলি অল্প সময়ের মাঝেই বিলি করে দিতে পারেন। অন্য দিকে দুরবর্তী শহর বা গ্রামে পত্রিকা পৌছাতে দেরি হয়। তাছাড়াও নদী নালা পাহাড় ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা আরও পত্রিকার পৌছাতে দেরি করায়।
৬. অর্থনৈতিক অবস্থা-
সংবাদ পত্রের বিপনন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর অনেকটা নির্ভরশীল। সাধারণ উচ্চ বিত্ত ও নিম্ন বিত্ত মানুষ সংবাদ পত্র কেনে এবং পড়ে। তাই সংবাদপত্র বিপননে দেশের কত শতাংশ মানুষ আর্থিক ভাবে সচ্ছল তার উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা সাজাতে হয়। বিক্রির সম্ভব্য ক্রেতা হিসেবে উচ্চ বিত্ত ও নিম্ন বিত্তদের ধরে নিতে হয় এবং তাদের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী সংবাদ সাজাতে হয়।
৭. সংবাদপত্র নীতি-
প্রতিটি সংবাদপত্রের নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা ও মতাদর্শ থাকে। সেটার উপর ভিত্তি করে তাদের সংবাদ ছাপানো হয়। পাঠকের মানসিকতা যদি সেই নীতিমালার বক্তব্যের সাথে মিলে তবে পাঠক সেই সংবাদপত্রের নিয়মিত পাঠক হয়ে ওঠে । এভাবে সংবাদপত্র সমাজের একটি বড় অংশের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে।
৮. সম্পাদকের রাজনৈতিক মতাদর্শ-
সম্পাদকের রাজনৈতিক মতাদর্শ সংবাদপত্রের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা সেই সংবাদপত্রের উপর আস্থাশীল হয়ে ওঠে। সংবাদপত্রের বিক্রিও বেড়ে যায় এ কারণে।
৯. সংবাদের বিষয়বস্তু-
একটি সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় বিভিন্ন বিষয় থাকে। কোন কোন সংবাদপত্রে আন্তর্জাতিক খবরের চেয়ে দেশের খবর বেশি প্রচার করে। আবার কোন কোন সংবাদপত্রে দেশের খবরের চেয়ে দেশের বাইরের খবর বেশি প্রচার করে। এই কারণে পাঠকের রুচির তাদের সংবাদপত্র কেনা নির্ভর করে।
১০. সংবাদ উপস্থাপনার ধরণ-
সংবাদ উপস্থাপনার ধরন বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন। সাধারণত বেশির ভাগ পত্রিকা প্রচলিত নিয়মে সংবাদ প্রচার করে। কোন কোন পত্রিকা ফিচার ধর্মী সংবাদ বেশি প্রকাশ করে। আবার কিছু পত্রিকা প্রচলিত নিয়মের (উল্টো পিরামিড) বাইরে সংবাদ প্রচার করে। পাঠকের কাছে সহজ পাঠ্য পত্রিকাই বেশি জনপ্রিয়তা পায়।
১১. সংবাদে বৈচিত্র-
সংবাদে বৈচিত্র আনা সংবাদপত্রের একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। একটি সংবাদপত্র বিভিন্ন ধরনের খবর যেমন দেশ বিদেশের খবরের পাশাপাশি বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার, নতুন কিছুর ঘটনা, বিনোদন, শিক্ষা ইত্যাদি প্রকাশিত হলে পাঠকরা একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পায়। যা পত্রিকার মান বাড়ায় সাথে বিক্রির হার বাড়িয়ে দেয়।
১২. সাংবাদিকের কৃতিত্ব এবং জনপ্রিয়তা-
প্রতিটি সংবাদপত্রে কিছু সাংবাদিক থাকে যারা আগে থেকেই বিখ্যাত এবং তাদের আলাদা পাঠক শ্রেণী রয়েছে। সেটি তার ধারাবাহিক সত্যনিষ্ঠ ও তদন্ত মূলক সংবাদের জন্য হতে পারে। পাঠক তার করা সংবাদকে বিশ্বাস করে এবং পড়ে। একারণে তার লেখা এলে পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যায়। এজন্য রিপোর্টারদের তার নিউজ রিপোর্টিং সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। উপস্থাপনার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি এবং সৃজনশীলতা বাড়াতে হবে।
১৩.ক্রোড়পত্র ,সাময়িকি-
ক্রোড়পত্র ,সাময়িকি প্রকাশ একটি সংবাদপত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন অনেক চাকরিপ্রার্থী চাকরির জন্য চাকরি জন্য আলাদা পাতা পড়ে, মেয়েরা তাদের সাজগোছের জন্য সাময়িকিতে ছাপানো বিভিন্ন প্রসাধনী ও পরামর্শের ফিচার পাতা পড়ে, সাহিত্য অনুরাগীরা সাহিত্য পাতা পড়ে। এগুলো অনেক সময় মূল ধারার সংবাদের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে যায়। যা সংবাদ পত্রের বিক্রি ও জনপ্রিয়তা দুটোই বাড়ায়।
১৪. দেশীয় সংবাদের গুরুত্ব প্রদান -
দেশীয় সংবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা অন্যান্য পত্রিকার চেয়ে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরলে পাঠক সংবাদ পত্রের উপর আস্থা খুজে পায়। জাতীয় বিভিন্ন দিবস, উতসবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমূহের প্রতি সকল পাঠকের আগ্রহ থাকে। এসব সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করলে পাঠক বাড়ে।
১৫. সংবাদপত্র সাজানো-
বিভিন্ন ধরনের সংবাদ একটি পত্রিকায় থাকে। সেগুলো বিষয় অনুযায়ি সাজালে তা সহজ পাঠ্য ও আকর্ষণীয় হয়। সাজানোর ব্যাপারে কিছু নিয়ম সব খানেই অনুসরণ করা হয়। সাধারণত ইংরেজি পত্রিকাগুলোতে ব্যবসায় ভিত্তিক সংবাদ financial express পত্রিকাকে অনুসরণ করে। পাঠকের কাছে সেগুলো গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। তাই এ নিয়মগুলোর আদলে সংবাদ সাজাতে হয়।
১৬. সিএসআর-
প্রচার ও প্রসারের জন্য কিছু সংবাদপত্রের সৌজন্য কপি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ,স্কুল কলেজ, বিপনীবিতানে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এতে সংবাদ পত্রের পরিচিতি বাড়ে যা বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করে।
১৭. পত্রিকা পরিবেশক ও হকারদের বিক্রির দক্ষতা-
পত্রিকা বিক্রির জন্য হকার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পত্রিকা বিলি করে আসে। আবার বিভিন্ন জনবহুল জায়গা যেমন বাস স্টেশন ,রেল স্টেশন , রাস্তার মোড় ইত্যাদিতে বিক্রি করে। সব পত্রিকা তাদের কম বেশি লভাংশ দিয়ে থাকে। তাই তাদের লভাংশ বেশি হলে তারা সেই পত্রিকা বিক্রিতে আগ্রহী হয়। আর তাদের বিক্রির পরিমাণ বেশি হলেই কেবল পত্রিকা বিক্রি বাড়ে।
প্রথম আলোর উপর বিপণনের ১৭ টি প্রধান কারনের বিশ্লেষণ -
১. জনসংখ্যা-
প্রথম আলো একটি শহর কেন্দ্রিক পত্রিকা। শহরে জনসংখ্যা বেশি। সাধারণত অফিসে, প্রতিষ্ঠানে প্রথম আলোর সংবাদপত্র রাখতে দেখা যায়। প্রথম আলো তাদের বেশীর ভাগ লেখা শহরের মানুষের উদ্দেশ্যে লিখে থাকে। শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি একারণে শহরে এটি বেশি প্রচারিত পত্রিকার একটি। অন্য দিকে গ্রামে প্রথম আলো খুব একটা বিক্রি হয় না। সেখানে অন্যান্য আঞ্চলিকা পত্রিকা বেশি বিক্রি হয়।
২. শিক্ষার হার -
শিক্ষার হার যেখানে বেশি পত্রিকাও সেখানে বেশি বিক্রি হয়। প্রথম আলোর ক্ষেত্রেও এখানে বেতিক্রম নয়। তবে প্রথম আলো তাদের অনেক সংবাদ ও সম্পাদকীয় উচ্চ শিক্ষিত পাঠকদের জন্য ছাপিয়ে থাকে। তাই এটি সমাজের বুদ্ধিজীবী সমাজের কাছে সমাদ্রিত।
৩. ঋতু -
প্রথম আলো পত্রিকা অন্যান্য পত্রিকার মত ঋতু ভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়।
৪. নির্দিষ্ট সময়-
বছরের বর্ষাকালে পরিবহণ ব্যবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন অন্যান্য পত্রিকার মত প্রথম আলোরর বিপনণ কমে যায়। কিন্তু দেশে হওয়া বিভিন্ন ঘটনা সময় এটি প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণ ককরে। যেমন- ভোট পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সময়ে প্রথম আলো বিভিন্ন জরিপ, বুদ্ধিজীবীদের আলোচনা পর্যালোচনা ছাপায় যা তাদের বিক্রি বাড়িয়ে দেয়।
৫. ভৌগলিক অবস্থান-
প্রথম আলোর ঢাকা ছাপা খানা থেকে দেশের সবখানে পৌছে দেয়া অনেক কঠিন ও সময় সাপেক্ষ ছিল। এজন্য ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের ছাপাখানা থেকে প্রথম আলো ছাপা শুরু হয় ২০১০ সালে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে উত্তরাঞ্চলের পাঠকের জন্য বগুড়ায় ছাপা শুরু করে। এতে প্রায় সারাদেশের পাঠক অন্যান্য পত্রিকার আগেই পত্রিকা হাতে পেয়ে যায়।
৬. অর্থনৈতিক অবস্থা-
প্রথম আলো ১৯৯৮ সালে যখন প্রথম পত্রিকা প্রকাশ শুরু করে তখন তার দাম ছিল ৬টাকা। পরে তা ৮টাকা হয় এবং বর্তমানে একটি কপি ১০টাকা হিসেবে বিক্রি হয়। অন্যান্য পত্রিকার তুলনায় এটি উচ্চ দামের। তাই এই পত্রিকা সাধারণত মধ্য বিত্ত ও উচ্চ বিত্তরা কিনে থাকে।
৭. সংবাদপত্রের নীতি-
প্রথমআলো নিজেদের সত্যনিষ্ঠ, অসম্প্রদায়িক, আপোষহীন হিসেবে দাবি করে। সাধারণ ভাবে বিচার করলে দেখা যায় এটি মৌলবাদি কোন সংবাদ প্রচার করে না, সরকারের অনেক দুর্নীতির প্রকাশ করে।
৮. সম্পাদকের রাজনৈতিক মতাদর্শ-
সম্পাদক অনেকের কাছে আওয়ামীলীগ ঘেষা লোক হিসেবে পরিচিত। তাই অনেকের কাছে পত্রিকাটি আওয়ামিলীগের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। যা পত্রিকার প্রচারের জন্য নেতিবাচক।
৯. সংবাদের বিষয়বস্তু-
প্রথম আলো দেশীয়, আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি, সম্পাদকীয়, মতামত, খেলা, বিনোদন, শিক্ষাসহ আরও অনেক বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। বেশির ভাগ পাঠকেরই এসব বিষয়াদি পছন্দ।
১০. সংবাদ উপস্থাপনার ধরণ-
প্রথম আলো প্রমিত বাংলা ব্যবহার করে। কিন্তু সেটা বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা ভাষা নয়। পত্রিকাটিকে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের "আনন্দ বাজার" পত্রিকার ভাষারীতি অনুসরণ করতে দেখা যায়। এছাড়া সাংবাদিকদের লেখা সুপাঠ্য। অনেকেই প্রথম আলোর সংবাদ লেখার ধরন পছন্দ করে।
১১. সংবাদে বৈচিত্র-
প্রথম আলো এক ঘেয়ে সংবাদের বাইরেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। এছাড়াও এটি প্রলচিত সংবাদ প্রচারের ধারার (উল্টো পিরামিড) বাইরে অনেক সময় সংবাদ প্রচার করে। যেমন উৎপল শুভ্র তার খেলার সংবাদ গুলি গদ্য আকারে প্রকাশ করে। এসব পাঠকের রুচির উন্নতি ঘটায়।
১২. সাংবাদিকের কৃতিত্ব এবং জনপ্রিয়তা-
প্রথম আলোতে জনপ্রিয় অনেক কথা সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক সরাসরি চাকরিরত রয়েছেন। যেমন- আনিসুল হক, উৎপল শুভ্র, রাজিব হাসান।
আনিসুল হক একাধারে লেখক-সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সত্য ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা মা বইটি বেশ জনপ্রিয়। শ্রেষ্ঠ টিভি নাট্যকার হিসেবে পুরস্কার, টেনাশিনাস পদকসহ বেশ কয়েকটা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স ক্লাব পদক, কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন পুরস্কারের পর ২০১২ সালে কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কারও পান দুটি।
এদিকে উৎপল শুভ্র ক্রিকেটের বাইবেল নামে পরিচিত উইজডেন ক্রিকেটার্সের অ্যালমনাইয়ের বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এর কারণে তাদের লেখা ছাপা হলে পত্রিকার আলাদা চাহিদা তৈরি হয়।
১৩.ক্রোড়পত্র ,সাময়িকি-
প্রথম আলো সপ্তাহের প্রতিটা দিনেই কোন না কোন ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। যেমন নকশা, রস+আলো, শিল্প সাহিত্য, বন্ধু সভা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জীবন যাপন।
১৪. দেশীয় সংবাদের গুরুত্ব প্রদান -
প্রথম আলোর সংবাদে দেশীয় সংবাদ বেশি ছাপা হয়। দেশের বিভিন্ন উতসবে পার্বনে প্রথম আলো সক্রিয় ভাবে ভূমিকা পালন করে। জাতীয় দিবস গুলোতে আলাদা লেখা ছাপা হয়। যা পাঠকের জানার চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু একে বারে স্থানীয় সংবাদ কম প্রচার করতে দেখা যায় এ পত্রিকায়।
১৫. সংবাদপত্র সাজানো-
প্রথম আলো খবর, খবরের ছবি, ব্যানার, বডি, ডেক, বাইলাইন, ক্যাপশন, কাট লাইন সবই গোছানো ভাবে সাজায়। এদের জাম্পস্টোরির আগে পাঠক ধরে রাখার মত তথ্য রেখে দেয়।
১৬. সিএসআর-
সাধারণত সরকারি বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজে প্রথম আলোর সৌজন্য সংখ্যা দিয়ে থাকে।
১৭. পত্রিকা পরিবেশক ও হকারদের বিক্রির দক্ষতা-
প্রথম আলো হকারদের কাছে পছন্দ সই একটি পত্রিকা। এটি একটি ব্রান্ড হিসেবে দাঁড়াতে পেরেছে। একারণে বিক্রি করতেও বেশি কষ্ট হয় না। এছাড়া প্রথম আলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত বিজ্ঞাপনের দিয়ে থাকে। একারণে পত্রিকা পাঠকদের কাছে এটি অনেক পরিচিত।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের উপর বিপণনের ১৭ টি প্রধান কারনের বিশ্লেষণ
১. জনসংখ্যা-
বাংলাদেশ প্রতিদিনের শহর কেন্দ্রিক পত্রিকা নয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের বেশীর ভাগ লেখা পুরো দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে লিখে থাকে। ঢাকার সাথে সাথে এটি গ্রামেও বিক্রি হয়।
২. শিক্ষার হার -
শিক্ষার হার যেখানে বেশি পত্রিকাও সেখানে বেশি বিক্রি হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনেক সংবাদ ও সম্পাদকীয় সর্বস্তরের পাঠকদের জন্য ছাপিয়ে থাকে। তাই এটি সমাজের বুদ্ধিজীবী থেকে সমাজের নিম্ন অল্পশিক্ষিতদের কাছেও সমাদ্রিত।
৩. ঋতু -
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা অন্যান্য পত্রিকার মত ঋতু ভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়।
৪. নির্দিষ্ট সময়-
বছরের বর্ষাকালে পরিবহণ ব্যবস্থা খারাপ হয়ে যায়। শীতে কুয়াশা জলে ও স্থলে পরিবহনে বিঘ্ন ঘটায়। অন্যান্য পত্রিকার মত বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিপনণ কমে যায়।
৫. ভৌগলিক অবস্থান-
বাংলাদেশ প্রতিদিন ঢাকা ছাপা খানা থেকে হকারের মাধ্যমে দেশের সবখানে পৌছে দেয়া হয়। কিন্তু দূরবর্তী জেলা শহর ও গ্রামের জন্য আলাদা ছাপা খানা না থাকায় তাতে বিলম্ব হয়।
৬. অর্থনৈতিক অবস্থা-
বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশনা ২০১০ সালের চালু হয়। যখন প্রথম পত্রিকা প্রকাশ শুরু করে তখন তার দাম ছিল ২টাকা। বর্তমানে একটি কপি ৫টাকা হিসেবে বিক্রি হয়। অন্যান্য পত্রিকার তুলনায় এটি কম দামের। তাই এই পত্রিকা সবাই কিনতে পারে। দেশের নিম্ন বিত্ত মানুষের এটি বিশেষ ভাবে পরিচিত।
৭. সংবাদপত্রের নীতি-
বাংলাদেশ প্রতিদিন গণমানুষের পত্রিকা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অনেক বিতর্কিত বিষয় প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সাধারণ ভাবে বিচার করলে দেখা যায় এটি ধর্মীও ও মৌলবাদীদের সহযোগীতা মুলক সংবাদ প্রচার করে। এটি বসুন্ধার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের মালিকানাধীন চারটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের একটি । একারণে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগীতা মুলক সংবাদ প্রচার করে। যা পত্রিকার প্রচারের জন্য নেতিবাচক
৮. সম্পাদকের রাজনৈতিক মতাদর্শ-
সম্পাদক নঈম নিজাম অনেকের কাছে আওয়ামীলীগ ঘেষা লোক হিসেবে পরিচিত।
৯. সংবাদের বিষয়বস্তু-
বাংলাদেশ প্রতিদিন দেশ, আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি, সম্পাদকীয়, মতামত, খেলা, বিনোদন, শিক্ষাসহ আরও অনেক বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে।
১০. সংবাদ উপস্থাপনার ধরণ-
বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রমিত বাংলা ব্যবহার করে। বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে দেখা যায়। এছাড়াও সাংবাদিকদের লেখা সুপাঠ্য।
১১. সংবাদে বৈচিত্র-
বাংলাদেশ প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। নগর জীবন, সম্পাদকীয়, খোলা কলাম, রকমারি, শোবিজ, স্বাস্থ্য, দেশগ্রাম, মাঠে ময়দানে ইত্যাদি অংশ প্রচারের মাধ্যমে তারা পাঠক সমাজে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে তারা প্রচলিত সংবাদ প্রচারের ধারার (উল্টো পিরামিড) মাধ্যমে বেশি সংবাদ প্রচার করে।
১২. সাংবাদিকের কৃতিত্ব এবং জনপ্রিয়তা-
বাংলাদেশ প্রতিদিনে তেমন কেউ জনপ্রিয় সাংবাদিক নেই।
১৩.ক্রোড়পত্র ,সাময়িকি-
সপ্তাহের প্রতিটা দিনেই বাংলাদেশ প্রতিদিনে কোন না কোন ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। যেমন পাঁচ ফোড়ন, শোবিজ, পরবাস, ক্যাম্পাস, কর্পোরেট কর্ণার, পাঠক কলাম ইত্যাদি।
১৪. দেশীয় সংবাদের গুরুত্ব প্রদান -
বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদে দেশীয় সংবাদ বেশি ছাপা হয়। স্থানীয় সংবাদ প্রচারে এটি প্রসিদ্ধ। দেশের বিভিন্ন উতসবে পার্বনে বাংলাদেশ প্রতিদিন সক্রিয় ভাবে ভূমিকা পালন করে। জাতীয় দিবস গুলোতে আলাদা লেখা ছাপা হয়। যা পাঠকের জানার চাহিদা পূরণ করে।
১৫. সংবাদপত্র সাজানো-
বাংলাদেশ প্রতিদিন খবর, খবরের ছবি, ব্যানার, বডি, ডেক, বাইলাইন, ক্যাপশন, কাট লাইন সবই গোছানো ভাবে সাজায়।
১৬. সিএসআর-
সাধারণত সরকারি বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজে বাংলাদেশ প্রতিদিন সৌজন্য সংখ্যা দিয়ে থাকে।
১৭. পত্রিকা পরিবেশক ও হকারদের বিক্রির দক্ষতা-
বাংলাদেশ প্রতিদিন হকারদের কাছে একটি পছন্দ সই একটি পত্রিকা। এটি কম মূল্যের হবার কারণে বিক্রি বেশি হয়। চাহিদা প্রচুর থাকায় লাভ বেশি হয়। পত্রিকা পরিবেশক ও হকারদরা বিক্রির দিক থেকে এটিকে এগিয়ে রাখে।
Comments
Post a Comment