এ দেশের টিভিতে এখন প্রতিদিন এক
ঘণ্টা, ধারাবাহিক সব মিলিয়ে প্রায়
৩০টি নাটক প্রচার হয়।
তারকাসমৃদ্ধ এসব নাটকের বেশিরভাগেই
নেই আগের মতো সেই
জৌলুস। প্রচার হওয়া বেশিরভাগ নাটকে
নেই গল্প, লোকেশনের ভিন্নতা, ধারাবাহিকে নেই ধারাবাহিকতা, শিল্পীদের
অভিনয়ে নেই কোনো প্রাণ।
এসব সমস্যা টিভি নাটকে গত
কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য
করা গেছে। এসব সমস্যার পেছনে
একটাই বিশেষ কারণ খুঁজে পেয়েছেন
নাট্যবোদ্ধারা। নাটকের এ বেহাল দশার
অন্তরালে যে সমস্যাটি বারবার
সামনে এসেছে, তা হলো 'বাজেটস্বল্পতা'। ফলে হাতেগোনা
কয়েকটি নাটক বাদে বেশিরভাগই
মানহীন। যে কারণে দর্শক
বিদেশি নাটক দেখতে বাধ্য
হচ্ছেন। বিভিন্ন নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে জানা
যায়, একটি ভালো নাটক
নির্মাণে নব্বইয়ের দশকে পাঁচ থেকে
ছয় লাখ টাকা পাওয়া
যেত। গল্পভেদে এর পরিমাণ আরও
বেশি হতো। কিন্তু বর্তমানে
একটি এক ঘণ্টার নাটকের
জন্য ১ লাখ ৮০
হাজার থেকে সর্বোচ্চ আড়াই
লাখ টাকা পাওয়া যায়।
অথচ নির্মাণ ব্যয় থেকে শুরু
করে শিল্পীর সম্মানী সবকিছু আগের চেয়ে অনেকগুণ
বেড়েছে। প্যাকেজ নাটক, পৃথিবীতে বোধ হয় এই
একটা জিনিসেরই দাম সবচেয়ে বেশি
কমেছে গত পাঁচ বছরে।
তা হলে প্রশ্ন দাঁড়ায়
নাটকের বাজেট আসলে এখন কত?
একটি নাটকের খরচের ধাপগুলো হলো_ শুটিং লোকেশন,
প্রপস, প্রডাকশন ম্যানেজার এবং বয়, ক্যামেরা,
লাইটস, ট্রলি/ডলি, জিব আর্ম,
ক্রেন, স্টেডিক্যাম, গাড়ি, খাবার, সম্পাদনা, ক্যামেরাম্যান, সহকারী পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। সাধারণত
কম বেশি সব নাটকের
ক্ষেত্রে উপরের বিষয়গুলো খরচ প্রায় একই
ধরনের হয়ে থাকে। তবে
খরচের বড় একটা অংশ
যায় শিল্পী সম্মানী বাবদ। কোন শিল্পীকে নিয়ে
কাজ করা হবে তার
ওপর নাটকের বাজেট ওঠানামা করে। আর এ
দেশে শিল্পী সম্মানীর কোনো নির্ধারিত তালিকা
নেই। ফলে যে যার
মতো করে শিল্পী সম্মানী
আদায় করে নিচ্ছেন। একটি
নাটকের মূল বাজেটের অর্ধেকেরও
বেশি দিতে হয় শিল্পী
সম্মানী বাবদ। এখন এক ঘণ্টার
নাটকের গল্পের জন্য গল্পকারকে দেওয়া
হয় ৫ থেকে ১০
হাজার টাকা, অনেক ক্ষেত্রে এর
চেয়ে কমও দেওয়া হয়
তাকে। অথচ গল্পই একটি
নাটকের প্রাণ। একজন ক্যামেরাম্যানকে প্রতিদিনের
জন্য ৫ থেকে ৭
হাজার টাকা, এ ছাড়াও প্রধান
সহকারী পরিচালকের সম্মানী আলোচনা করে ঠিক করে
নেন। তবে অন্য সহকারী
পরিচালক প্রতিদিনের জন্য ৫০০/১০০০
বা সর্বোচ্চ ২০০০ টাকার বেশি
পান না। লাইটের ক্ষেত্রে
গড়ে ৩ থেকে ৫
হাজার টাকা
লাগে। ক্যামেরা ভাড়া ৩ থেকে
১০ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটা নির্ভর করছে
কোন ক্যামেরা দিয়ে নাটকটির চিত্রায়ণ
হচ্ছে তার ওপর।
খোঁজ
নিয়ে জানা যায়, একটি
এক ঘণ্টার নাটক বা ধারাবাহিক
নাটক কেনার ক্ষেত্রে টিভি চ্যানেলগুলোতে নির্দিষ্ট
কোনো মূল্য নির্ধারণ করা নেই।
টেলিভিশন
নাটক নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারে
ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোর কোনো নীতিমালা নেই।
ফলে যে কেউ তার
ইচ্ছামতো নাটক নির্মাণ করে
টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটা প্রচার
করতে পারছেন। দেশীয় নাটককে বাঁচাতে ভালো বাজেট চাই।
এ নিয়ে কী ভাবছে
চ্যানেল কর্তৃপক্ষ? মানহীন নাটকের জন্য চ্যানেল দায়ী
করছে নির্মাতাদের। নির্মাতারা দায়ী করছেন অল্প
বাজেটকে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাদের আর্থিক অসঙ্গতির জন্য বিজ্ঞাপনের বাজেট
কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। আর
বিজ্ঞাপনদাতারা দায়ী করছেন চ্যানেলগুলোর
দর্শক হারানোকে। যার যার দৃষ্টিকোণ
থেকে সবাই হয়তো ঠিকই
বলেছেন। সবাই তাদের সীমাবদ্ধতার
কথা বলেছেন। কিন্তু সমাধানের পথ কী হবে
সেটা নির্দিষ্ট করতে পারছেন না।
এই সংকট থেকে উত্তরণের
উপায়গুলো আসলে টিভি নাটকের
সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই করতে পারবেন। সেই
সঙ্গে সৃজনশীল মানুষকে যুক্ত করতে হবে এ
পেশায়। তবেই টিভি নাটক
দর্শকের কাছে আবার গ্রহণযোগ্য
হয়ে উঠবে।
Comments
Post a Comment