বাংলাদেশ
বেতারে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে
সেই গৌরব হারাতে বসেছে
প্রতিষ্ঠানটি। নিয়মিত মহাপরিচালক, উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান),
পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ছাড়াই
চলছে জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমটি। এ ছাড়া অন্যত্র
বদলির পরও বেতারেই অফিস
চালিয়ে যাওয়া, একই পদের বিপরীতে
দুই ব্যক্তির বেতন উত্তোলন, সাধারণ
ক্যাডারের পদে প্রকৌশলী পদায়ন,
স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠানের ত্রুটিযুক্ত প্রচারসহ রয়েছে আরও নানা অব্যবস্থাপনা।
অনুসন্ধানে
জানা যায়, ওএসডি হয়ে
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ
মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি দেয়ার পরও বেতারেই অফিস
করছেন এর ‘সাবেক’ পরিচালক
(প্রশাসন ও অর্থ) মিজানুর
রহমান। ৮ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয়ের ৯০ নম্বর গেজেটে
৬নং ক্রমিকে বর্ণিত আদেশানুসারে তাকে ওএসডি করা
হয়। শুধু তাই নয়,
বেতারের দাফতরিক কাজে তিনি ভ্রমণও
করেছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির
কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অভিযোগ
রয়েছে, তিনি একজন অতিরিক্ত
সচিব হয়েও তিনধাপ নিচে
উপসচিবের পদ পরিচালক (প্রশাসন
ও অর্থ) এর দায়িত্বে চার
বছর ধরে কাজ করছেন।
এখানেই
শেষ নয়। সরকারের একটি
পদের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির বেতন নেয়ার কোনো
বিধান নেই। কিন্তু বেতারের
পরিচালক (অনুষ্ঠান) পদের বিপরীতে তিন
মাস ধরে (ডিসেম্বর ’১৬-
ফেব্রুয়ারি ’১৭) বেতন নিচ্ছেন
নসরুল্লাহ মোহাম্মদ ইরফান ও মো. সালাউদ্দিন
নামে দুই কর্মকর্তা।
এদিকে
বেতারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপ-মহাপরিচালক পদটি
শূন্য পড়ে আছে দুই
বছরের বেশি সময়। ২০১৪
সালে জাহিদুর রহমান অবসরে যাওয়ার পর থেকে পরিচালক
মো. সালাউদ্দিনকে সময়ে সময়ে চলতি
দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু
এখন কেউ দায়িত্বে নেই।
জানা যায়, গত বাজেট
অধিবেশনে বেতারে বিএনপির দলীয় সঙ্গীত ‘প্রথম
বাংলাদেশ’ গানটি বেজে ওঠার পর
দায়িত্বে অবহেলার তদন্ত ও ২০০৯ সালে
খুলনায় আঞ্চলিক পরিচালক থাকাকালে দুর্নীতি দমন কমিশনে তার
বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পুনরুজ্জীবিত
হওয়ায় তাকেও গত বছরের নভেম্বরের
পর আর দায়িত্ব দেয়া
হয়নি।
এদিকে
বেতারের উপ-পরিচালক (প্রশাসন
ও অর্থ) পদটি তথ্য সাধারণ
ক্যাডারের পদ হলেও তথ্য
সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে এ
পদে সংযুক্ত রয়েছেন প্রকৌশলী হামিদুর রহমান। ২০১১-১২ অর্থবছরে
দায়ের করা ১০০ কোটি
টাকার প্রকল্পে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা
থেকে নিষ্কৃতি নিয়েই এ সংযুক্তির মাধ্যমে
বেতারের নিয়োগ কমিটির সদস্য হন তিনি। পরপর
দুটি নিয়োগ শেষে ৩ অক্টোবর
২০১৬ তে প্রকাশিত নিয়োগ
বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, হামিদুর
রহমান নিয়োগ কমিটিতে রয়েছেন সদস্য-সচিব হিসেবে। সম্প্রতি
একজন অতিরিক্ত সচিবের কাছ থেকে হামিদুরের
আগারগাঁও বিএনপি বাজারে অবস্থিত প্রায় দুই কোটি টাকার
সুরম্য একটি ফ্ল্যাট কেনার
খবরও বেতারের সর্বমহলে বেশ আলোচিত।
তথ্য
মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তা অতিরিক্ত
দায়িত্ব হিসেবে বেতারের মহাপরিচালকের সাময়িক দায়িত্বে আছেন তিনি অত্যন্ত
কর্মব্যস্ত সম্প্রচার শাখার অতিরিক্ত সচিব। জবাবদিহিতার অভাবে এমন নানা অসংগতিতে
ভরে গেছে জাতীয় এ
সম্প্রচার মাধ্যমটি। প্রতিষ্ঠানটির নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তারা মনে করেন এভাবে
চলতে থাকলে মুখ থুবড়ে পড়বে
বেতার। তাই এসব বিষয়ে
এখনই সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
Comments
Post a Comment