Skip to main content

"ঢাবিতে মেয়েদের জামাকাপড় খুলে নেয়া হয়েছে কারণ তারা নাকি নাভীর নিচে কাপড় পড়েছিল"

ঢাবিতে মেয়েদের জামাকাপড় খুলে নেয়া হয়েছে কারণ তারা নাকি নাভীর নিচে কাপড় পড়েছিল।

আমার শ্রদ্ধেয় গুরুজনেরা ছোটবেলায় আমাকে নারীজাতির সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছেন যে
"লজ্জা নারীর ভূষণ, মেয়েদের চুল দেখা হারাম, পর্দা ছাড়া সব নারী রাস্তার কুকুরের মত এজন্য দোজখে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি হবে, নির্দিষ্ট বয়সের পর নারীকে নিজ বাড়িতে নাহয় শ্বশুরবাড়িতে থাকতে হবে, স্বামী, বাবা, ভাই ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না, সামনে পর্দা ছাড়া নারী চলে এলে আর প্রতিবাদ করতে না পারলে দৃষ্টি নত রাখবে, নিজ নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে (না দেখিয়ে বেড়ানো আর কি), শয়তান নারীর মাঝে বাস করে, বিয়েছাড়া পুরুষের সাথে যেকোন সম্পর্কই অবৈধ্য, নারীর কারণে আজ আমরা পুরুষেরা ভুগছি, আমাদের বেহেস্তে থাকার কথা ছিল কিন্তু নারীর লোভ পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে।  "

মোটামুটি এসবই। আমি ছোট থেকেই বাইরে। একা একা এতবড় হয়েছি। বাবা মায়ের সাথে একসাথে থাকা কি এখনও আমি জানি না! আমার সামাজিকিকরণ একরকম প্রকৃতির ধুলাবালি, গাছপালা,গল্পের বই এসব থেকে হয়েছে। তাই আমি বলতে পারব না উপরের ব্যাপারগুলোই মেয়েদের সত্যি বা মিথ্যা বা অতিরন্জিত। আগে বর্ডিং স্কুলে থাকার সময় মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। সেসময় মসজিদে যাওয়া আসার সময়  এসব বেশি আলোচনা হত। তারপর অনেক শিক্ষক ছিল তারা এগুলো বলতেন। তারা কেউ আমাকে নারী স্বাধীনতার কথা বলেনি।

তারপর একটু বয়স হলে নারী স্বাধীনতা নামক নতুন এক জ্ঞানের জগতে প্রবেশ করেছি। জ্ঞান টা একেকজনের কাছে একেক রকম।

কারো কাছে তার নিজ ইচ্ছেমত কাপড় পড়া, নিজ ইচ্ছে মত জায়গায় যাওয়া, নিজ ইচ্ছেমত নিজের জীবনকে বেঁছে নেয়ার নাম নারী স্বাধীনতা।

কারো কাছে নিজ ইচ্ছে মত বাইরে আসার নাম নারী স্বাধীনতা, কাপড়চোপড়ে পর্দা আবশ্যক। নারীর পোষাক তারা নয় সমাজ ঠিক করে দেবে।

কারো কাছে "আমার এত্তগুলা ছেলে ফ্রেন্ড আছে (বয়ফ্রেন্ড না কিন্তু), আমার বাবা মা বা স্বামী আমাকে এ নিয়ে পূর্ণস্বাধীনতা দিয়েছে" টাইপ স্বাধীনতাই নারী স্বাধীনতা। পোষাক, বাইরে ঘোরাফেরায় অবশ্যই লাগাম লাগানো তাদের।

কারো কাছে নারী স্বাধীনতা মানে নারী পুরুষ সবাই সমান টাইপ তত্ত্ব । কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে সবাই সমান তত্ত্ব খাটে না। তাই নারীরা এই তত্ত্বকে নিজ নিজ ইচ্ছেমত মডারেশন করে নিয়েছে। যেমন নারীরা সন্তান ধারন করতে পারে সে অধিকার পুরুষ পায় নি , পুরুষেরা জিন্সের প্যান্ট এতনিচে পড়ে যে অন্ধকার গুহাও দেখা যায়। পুরুষের এই স্বাধীনতা কোন নারী এখনও গ্রহণ করেনি।  (আমার দুষ্টু বন্ধুরা রাস্তাঘাটে এই অন্ধকার গুহা দেখলেই ছাত্রলীগ দেখা যায় বলে চেঁচিয়ে ওঠে কারণ বেশির ভাগ ছাত্রলীগ কর্মীর অন্ধকার গুহায় সূর্যের আলো প্রবেশ করে।)

কারো কাছে নারী স্বাধীনতা মানে নাস্তিকতা, পাপ। তাদের কাছে সব নারীই স্বাধীন। মহানবী (সঃ) আসার আগ পর্যন্ত সব নারী পরাধীন ছিল। তারপর ইসলাম ধর্ম সবাইকে স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে।

কারো কাছে পাশ্চাত্যের নারীরা যেভাবে ঘোরে সেটাই নারী স্বাধীনতা, বাঙ্গালী নারীরা কখনও স্বাধীন হতে পারে নি।

নারী স্বাধীনতার এতগুলো তত্ত্ব, নারীদের নিয়ে ছোট বেলার শিক্ষা সবগুলো মিলিয়ে আমার কাছে নারীর আসলে কি করা উচিত আর কি করা উচিত না সেটা বিরাট ঘোট পাকিয়েছে।

কিন্তু মেয়েদের কাছে কি ঘোট পাকায় না এটা নিয়ে? তার কি করা উচিত আর কি করা উচিত না?

আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করার পর বুঝলাম আমি মেয়ে হলে কখনই ঘোট পাকাতো না এটা। কারণ তখন আমি মেয়ে হিসেবে চিন্তা না করে একটা সত্তা হিসেবে নিজেকে চিন্তা করতাম। যেই সত্তার ভেতরে কিছু চাওয়া আছে, ভালবাসা আছে, খারাপবাসা আছে, ঘৃণা আছে, অভিজ্ঞতা আছে, ধর্ম মানার বাধ্যবাধকতা আছে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে, মা, নানি, বোন এদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা আছে। সব মিলিয়ে আমার মাঝে একটা ব্যক্তিত্ব তৈরি হত যেখানে আগেই ঠিক করে দেয়া এটা ঠিক এটা ভুল।

যার অর্থ নারীদের তার নিজ নিজ মতের উপর অধিকার দিলে যে যার মত থাকবে, কখনই যেটা তার মতবিরুদ্ধ সেটা নিয়ে মারামারি বা অন্যদের কাপড় ধরে টেনে খুলে নেবে না। অনেকটা অংকের মত হল ব্যাপারটা। যেদিক দিয়েই যাই সমাধানে এটাই আসে যে যার যেমন ইচ্ছে তাকে তেমন ভাবে থাকতে দিলে সব সমস্যার সমাধান। আমি শুধু শুধু পেঁচিয়ে এত সব কথা তুলে ধরলাম।

কিন্তু এই একটা "শুধু শুধু " ব্যাপারটা ছেলেরাও মানতে পারে না, মেয়েরাও মানতে পারে না। ছেলেরা চায় মেয়েরা এভাবে চলুক, এটা দিনে ঢাকুক, সিনেমার মাঝে ওটা খুলুক।
মেয়েরা মনে করে তার মতাদর্শটাই আদর্শ মতাদর্শ, এভাবে না চললে পুরুষেরা গায়ে হাত দেবেই, কাপড়ে টান দেবেই, সুযোগ পেলে বিছানাতেও টেনে হিচড়ে নিয়ে যাবে।

উপরে একটা কথাও নতুন কোন কথা না। কারও প্রতি আমার কোন উপদেশ না। সমাজ উদ্ধার করে ফেললাম টাইপ টিপিকাল স্টাটাসও না। আমি আসলে বের করার চেষ্টা করলাম আমার মাথায় কি কি আছে নারী বিষয়ে। তবে এটুকু হৃদয় থেকে বুঝি বাংলার মেয়েদের বিধর্মী পহেলা বৈশাখ পালন করা খারাপ নাকি পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে পর্দার সাথে যাওয়াও খারাপ নাকি পর্দা ছাড়া হিন্দুয়ানী শাড়ি পড়ে যাওয়া বেশি খারাপ নাকি নাভির নিচে কাপড় পরে যাওয়া সবচেয়ে খারাপ এসব খারাপের সিদ্ধান্ত যতদিন পুরুষের হাতে থাকবে, নারীরা যতদিন পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকবে, ততদিন কাপড় থেকে শুরু করে সম্মান অধিকার সব খুলে নেবে পুরুষেরা। আমার ছোট মাথায় এটাই আসে।

Comments

Popular posts from this blog

Abar ( আবার ) Lyrics - Minar Rahman

Abar ( আবার ) Lyrics - Minar Rahman তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে ?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে ? দেবো না জল আসতে চোখে ,  কোনদিনও আর ,  আর একটি বার দাও যদি জল মোছার অধিকার । তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে ?  আমি তোমার নতুন ভোরের সূর্য হতে চাই ,  আমি আবার তোমার আসার প্রদীপ হতে চাই ।  দেবো না জল আসতে চোখে,  কোনদিনও আর,  আর একটি বার দাও যদি জল মোছার অধিকার ।  তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে?  মুছে ফেলো অভিমানের দাগটি তুমি এবার,  হাসির আলো,  আমায় করো আলোকিত আবার । দেবো না জল আসতে চোখে,  কোনদিনও আর,  আর একটি বার দাও যদি জল মোছার অধিকার।  তুমি কি আমার হাসি সুখের আবার কারন হবে?  তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বাড়ন হবে? Song: Abar Singer: Minar Lyrics: Snahashish Ghosh Music: Rezwan Sheikh Cast: Siam & Saira DOP: Suman Sarker Direction: Mahmudur Rahman Hime Asst director team: Emran Robin, Dipto...

Bangladeshi Movie Download Sites (বাংলাদেশী মুভি ডাউনলোড)

NEXTGEN BD - http://180.200.238.22/ Orangebd- orangebd home bd http://103.3.226.206/ Bangla Movie Download Sites new bangla movie Bangladeshi movies

Tamak Pata By Ashes Lyrics ► তামাক পাতা আশেজ লিরিক্স জুনায়েদ ইভান

তুমি তামাক ধরাও তামাক ধরাও আগুন জ্বালিয়ে দাও। আগুন জ্বালালে উড়ে যাবে পাখি মনা আগুন জ্বালালে উড়ে যাবে পাখি। নেশা কেটে গেলে তুমিও কেটে যাবে। জটিল করলে জটিল হবে, সহজ করলে সহজ। মাথার ভিতরে গাঁজা ঘুরে গাঁজার ভিতরে মাথা গাজার ভিতরে মাথা ঘুরে তামাক বৃক্ষের পাতা। তুমি মাঝে মাঝে আমার কাছে কবিতা চাইতা তুমি মাঝে মাঝে আমার কাছে কবিতা চাইতা মনের বিরুদ্ধে কবিতা লিখতাম আমি মনের বিরুদ্ধে কবিতা লিখতাম মনের বিরুদ্ধে কি? কবিতা লেখা যায় রে? জটিল করলে জটিল হবে, সহজ করলে সহজ। মাথার ভিতরে গাঁজা ঘুরে গাঁজার ভিতরে মাথা, গাজার ভিতরে মাথা ঘুরে তামাক বৃক্ষের পাতা। তুমি মাঝেমাঝে তোমার মাঝে আমারে চাইতা! তুমি মাঝেমাঝে আমার মাঝে তোমারে চাইতা! আমি মনের বিরুদ্ধে নিজেরে দিতাম হায় আমি! মনের বিরুদ্ধে নিজেরে দিতাম হায়! মনের বিরুদ্ধে কি? নিজেরে দেয়া যায় রে? জটিল করলে জটিল হবে, সহজ করলে সহজ। মাথার ভিতরে গাঁজা ঘুরে গাঁজার ভিতরে মাথা, গাজার ভিতরে মাথা ঘুরে তামাক বৃক্ষের পাতা। নেশা কেটে গেলে তুমিও কেটে যাবে... tamak pata lyrics in english tamak pata lyrics mp3 tamak pata l...